এক পাশে কপোতাক্ষ নদ, অন্য পাশে শাকবাড়িয়া নদীর তীর ঘেঁষে যত দূর চোখ যায় চলে গেছে সুন্দরবন। যেখানে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখা যাবে সে জায়গাটিও একসময় ছিল সুন্দরবনের অংশ। শত বর্ষ আগে এখানে বন কেটে মানুষের আবাস স্থল গড়ে ওঠে বলে জানা যায়। মাটি খুড়লেই তাই এখনও পাওয়া যায় বড় বড় গাছের গুড়ি। সুন্দরবন আর দুই নদীর মাঝ খানের স্থানটির নাম কাটকাটা।
সুন্দরবনের কাঠ কেটে আবাদ করায় হয়তো স্থানটির পরিচিতিও সেভাবে পেয়েছে। এখানে আজও বসবাস করেন বেশ কিছু আদিবাসী মুন্ডা মাহাতো পরিবার। খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবনের গা ঘেঁষা এ স্থানটিতে দাঁড়ালে সুন্দরবনের কয়েক কিলোমিটার এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এক নিমিষেই। শোনা যায় বাঘ, হরিণ ও পাখ পাখালির ডাক। যে কারণে বছর জুড়ে সেখানে স্থানীয়রা সহ বাইরে থেকে যারা কয়রা উপজেলায় বিভিন্ন কাজে কিংবা বেড়াতে আসেন সকলেই এ স্থানটি একবার ঘুরে যান। অনেকেই কাঠের বৈঠাবাহি নৌকা অথবা ট্রলারে করে ঘুরে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগমও ঘটে এখানে। পরিকল্পিভাবে এ স্থানটিতে পর্যটনের জন্য সু-ব্যবস্থা করা হলে সুন্দরবনের হিরণপয়েন্ট,কালাবগী, শেখেরটেক, দুবলারচর, কটকা-কচিখালি, কলাগাছিয়া, করমজলের মত সুন্দরবনের দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে কাটকাটা এলাকা। সুন্দরবনের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন লোকালয় থেকে অনেক দূরে তেমনি সে সব স্থানে পর্যটকদের পৌঁছাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। তবে কাটকাটা এলাকায় সহজে পৌছানো সম্ভব এবং এখানে বসে দিন রাত ২৪ ঘন্টা সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। সেই সঙ্গে মাইকেলের কপোতাক্ষ নদের সৌন্দর্যও উপভোগ করবেন পর্যটকরা। কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ.ব.ম আঃ মালেক বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এ এলাকাটিতে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে একদিকে কমবে বনের উপর স্থানীয় মানুষের নির্ভরশীলতা অন্যদিকে এলাকার অধিকাংশ মানুষের কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পর্যটন খাতে সুন্দরবন থেকে বছরে যে পরিমান রাজস্ব আদায় হয় তা বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, সড়ক পথে সহজে এখানে পৌঁছানো সম্ভব এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্যন্য স্থানের চেয়ে এখানে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, সুন্দরবনের এ স্থান থেকে অনেক সহজে, কলাগাছিয়া, কালাবগী, শেখেরটেক, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চরে পৌছানো যায়। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সুন্দরবনের বিশাল অংশের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সাগর উপকূলের নদ-নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। তাছাড়া পর্যটক ও নিরাপত্তাকর্মীদের আনাগোনায় সুন্দরবনের অবৈধ অনুপ্রবেশ অনেকাংশে কমে যাবে। কাটকাটা এলাকার রিপন হোসেন বলেন, এখানে ইতোমধ্যে মনোরম পরিবেশে রেষ্টুরেন্ট তৈরী করা হয়েছে। কপি হাউজে কপি খেতে প্রচুর লোক আসে। এ ছাড়া সুন্দরবন উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন শত শত লোক সমাগম হয়। বর্তমানে অত্যাধুনীক বোর্ডের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা সুন্দরবন ভ্রমন করতে পারছে সহলমুল্যে। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন, পরিকল্পিতভাবে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এখানে গড়ে উঠলে এলাকায় সামগ্রীক জীবন যাত্রায় এর প্রভাব পড়বে। বদলে যাবে এলাকার চালচিত্র। গড়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্রিক নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অবহেলিত জনপদের মানুষের ভাগ্য বদলে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে কয়রা উপজেলার কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্রটি। তিনি আরও বলেন, কাটকাটা এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply